সতী নারী
সতী নারী – রথীন ঘোষ
অনেকদিন আগের কথা, তখন চারিদিকে
রাজার শাসন, সেই রকম একটা
দেশের গল্প বলি, ঘটনাটা আজও প্রাসঙ্গিক। এক দেশে এক রাজা ছিল, রাজার রাজত্বে সবাই খুব সুখ ও শান্তিতে
ছিল। রাজা মশাইও খুব বিনয়ী ও প্রজা বৎসল
ছিলেন। কিন্তু এই রকম একটি সুখি সমৃদ্ধ রাজ্যে
একবার এক অশুভ সংকেত দেখা দিলো। সেই সুন্দর রাজ্যে
একটা বট গাছ হঠাৎ করে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। সেই বট গাছটা এত প্রাচীন ছিলো যে, তার বয়স সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারত না। সে ছিল, সে রাজ্যের আদি ও প্রাচীন। সেই গাছকে সকলে ইশ্বর জ্ঞানে পুজা করত। তাই দেশের এই রকম একটা গাছের শুকিয়ে
যাওয়াকে সকলে অশুভ সংকেত মনে করল। তাই সবাই রাজার
কাছে গেল। রাজা মন্ত্রী ও রাজগুরুর সঙ্গে আলোচনা
করলেন কিন্তু কেউ কোন বিধান দিতে পারলেন না। তার পর সকলে মিলে ঠিক করলেন যে, হিমালয়ে সিদ্ধ পুরুষ সন্ন্যাসী আছে সেখান থেকে, সন্ন্যাসী কে আনতে হবে। অনেক অনুরোধ উপরোধের পর সন্ন্যাসী এলেন, সব দেখে শুনে বিধান দিলেন যে, যদি কোন সতী নারী, সেই শুকোতে শুরু করা বট গাছটাতে জল
দেয়, তাহলে গাছটা জ্যান্ত হয়ে উঠবে। এই কথা শুনে রাজা বললেন ও এই ব্যাপার
ঠিক আছে, আমার স্ত্রী
কাল সকালে সুর্যদোয়ের পর এসে বট গাছে জল দিয়ে দিবে। রাজা মশাই রাতে রানীমা কে বললেন, রানীমা ত রেগেই অস্থির, তিনি বললেন কি এত বড় স্পর্ধা তোমার
তুমি আমাকে সন্দেহ কর। আমার পরীক্ষা নিবে। রানী মা এদিকে মনে মনে ভাবছে, বিয়ের আগে তো কত রাজ কুমারের না স্বপ্ন
দেখেছি, তার জন্য যদি
দোষ হয়ে যায়, রাজা মশাই বললেন
না না প্রিয়ে তোমার পরীক্ষা নয়, গাছ টাকে বাঁচাতে হবে তো নইলে প্রজাদের অকল্যান হবে যে। রাজা মশাই আর কথা বাড়ালেন না। অনেক চেষ্টা করেও রাজি হল না। শেষে পাঁচ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা ঘোষণা
করা হল তাতেও কেউ রাজী হল না। শেষে অর্ধেক
রাজ্য, কিন্তু তাতেও
রাজী হল না।
কয়েকদিন পার হয়ে গেলো কিন্তু কোন সমাধান নেই, শেষে এক বারবনিতা সকালে চান করে ভগবানের
কাছে প্রার্থনা করল, হে ভগবান আমি
আজ পর্যন্ত কাউকে মন দিতে পারিনি, শুধু পয়সার বিনিময়ে শরীর দিয়েছি। এই নিবেদন করে সে, সেই বট গাছটার চারিদিক ঘুরে প্রনাম
করে জল ঢেলে দিল, আর সঙ্গে গাছটা
ভালো হয়ে গেল।
সবাই সন্ন্যাসী কে জিজ্ঞেস করল আপনি বললেন সতী নারীকে জল দিতে, ও তো সমাজের
পতিতা। সন্ন্যাসী বললেন, চামড়ায় দাগ লাগলে সেটা পরিষ্কার
হবে কিন্তু মনে দাগ লাগলে কি হবে। ভগবানের কাছে তো শরীরটা যাবে না কিন্তু মনটা
যাবে। আর ওকে খারাপ বলতে গেলে তো ঐ পুরুষ গুলোকে খুঁজতে হবে যারা ওর সঙ্গে খারাপ
কাজ করেছে।
আজ ও তথাকথিত খারাপ মেয়েদের সমাজ খারাপ চোখে দেখে আর তাদের কাছে যারা যায় তারা
সম্মানীয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন