বাবু উপরে দেখ
বাবু উপরে দেখ – রথীন ঘোষ
আমার বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের কানকি গ্রামে, আমার ছোটবেলা ওখানেই কেটেছে। গ্রামে একটা ছোট রেল স্টেশন, স্টেশনের পাশে বট গাছ। অনেক গুলো বট গাছ ছিল খান চারেক, অনেক ঝুড়ি ঝুলত। আমাদের খেলা ছিল ঐ বট গাছেই। পাশেই একটা ছোট পুকুর ও ছিল। আমাদের চান করার জন্য যথেষ্ট। আমাদের বাড়ির গরু মোষ গুলোও ওখানেই
চান করত। স্কুল যাওয়ার আগে আবার স্কুল থেকে আসার
পর আমরা ওখানেই থাকতাম।
তবে ঐ বটগাছের নিচে মাঝে মাঝে যাযাবররা বাসা বাঁধত। তখন আমাদের ছন্দ
পতন ঘটত। কিন্তু আমি ছাড়ার পাত্র নই। যাযাবর আসলে বন্ধুরা আর সেখানে যেত না কিন্তু
আমি তাও ওখানেই থাকতাম। ওরা অনেক লোক থাকত। ওদের ছেলে পেলেও থাকত। ওরাই আমার তখন বন্ধু হয়ে যেত। কত বার ওদের সঙ্গে হাপু শিখতে তে গিয়ে
থুৎনি, পিঠে ব্যাথা খিয়েছি। একটা সাপুড়ের
দলও আসত, সাপ গুলো কি সুন্দর ছিল। ওরা ওদের সঙ্গে খেলত।
এই রকম বিভিন্ন দল আসতে আসতে এক বার মধ্যপ্রদেশের একটা দল আসল। ওদের বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা দড়ির
উপর হাঁটা খেলা দেখাত। ওত উচু দড়িতে শুধুকি হাঁটা কত ধরনের
লাফানো। ঐ দলে একটা মেয়ে ছিল সাবিয়া ওর তখন
শিক্ষণ পর্ব চলছিল। আমার ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। ওর সঙ্গে আমিও খেলা শিখতে শুরু করলাম। কিন্তু যত বার হাঁটতে চেষ্টা করি নিচে
পরে যাই। পর পর তিন বার পরলাম। যদি নিচে গদি দিয়েছিল কিন্তু ব্যাথা
তাও লেগেছিল। কিন্তু ব্যাথা থেকে বেশী ছিল অপমানের
জ্বালা। সাবিয়া বলছিল ও পারছে আমি কেন পারছিনা। সেই বয়সেই সাবিয়াকে করে দেখাতে হবে
জেদ চেপে গেল। তিন বার পরার পর ওর বাবা আমাকে, “বলল বাবু উপরে দেখ কে চল”, সামনে তাকিয়ে হাঁটো। হ্যাঁ সত্যি তো কি আনন্দ যেই উপরে দেখে
হাঁটলাম তিন পা যেতে পারলাম। আবার যেই নিচে
দেখলাম আবার পরে গেলাম।
জীবনের এই প্রান্তে এসে এত দেশ বিদেশ ঘুরে ৪২ বছর বয়সে সাবিয়ার বাবার ঐ কথাটা আবার
নতুন করে কানে বাজছে। ‘বাবু উপর দেখ’ অর্থাৎ সামনের দিকে তাকাও, কেন শুধু যে পেছনে তাকাছি আর শুধু পরে
যাচ্ছি। ২ বছর থেকে শুধু সামনের দিকে তাকাবার
চেষ্টা করছি। আর চারপাশের হিতাকাংখীরা শুধু চারিদিকে
গর্ত গুলোর কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন