সফল অভিভাবকত্ব।
https://www.youtube.com/watch?v=sB7M72N3oq8&t=431s&spfreload=5
সফল অভিভাবকত্ব।
সফল অভিভাবকত্ব।
রথীন ঘোষ
আপনার
সন্তান কি আপনার কথা শোনে না?
আপনার
সন্তান কি সব সময় টিভি, মোবাইল, ভিডিও গেম নিয়ে থাকতে চায়?
আপনার
সন্তান কি বাজে ছেলে -মেয়ে দের সঙ্গে মিশছে?
আপনার
সন্তান কি সব সময় কিছু না কিছু বাজে জিনিষের চাহিদা করছে?
আপনার
সন্তান কি আপনার কষ্টার্জিত টাকা গুলোকে জলের মতো খরচ করছে?
যদি উপরের
কথাগুলোর একটিও আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তাহলে, আপনাকে অনুরোধ করছি আমার এই পুরো
লেখাটা পড়ার জন্য। আমার এই লেখা গুলো বিশ্বাস করবেন না, হ্যাঁ একদম বিশ্বাস করবেন না,
আপনার জীবনে পরীক্ষা করে দেখে নিন। প্রতিটা শিশু আমার জন্য ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ
উপহার, যা আমরা বাবা-মা হওয়ার মাধ্যমে পাই।
আমি কথা
দিচ্ছি আমার এই লেখাটি পড়ার পর আপনার সন্তানের ব্যবহারে পরিবর্তন আসবেই, ভগবানের
জীবন নির্মাণের কার্যকলাপে আমরা প্রত্যেকে খুব ভালো ঈশ্বরের পার্টনার হতে পারব।
যখন আমাদের
সন্তানেরা দুষ্টুমি করে তখন আমরা কি করি? প্রথমে তাদের মানা করি, বলি দেখ বাবু,
দেখ সোনা, সব সময় টিভি দেখা ভালো না, পড় ভালো করে পড়তে হবে, টাস্ক কর, খুব বোঝাই, এর
ফল তো কিছুক্ষন থাকে, এত করে যখন বুঝিয়েছি। কিন্তু কিছুক্ষন পড় আবার যে কা সেই হয়ে
যায়। এবার আমরা বোকা দিই, জোরে শাসন করি, এবার ফল আরও কিছুক্ষন বেশি থাকে কিন্তু
এক দের ঘণ্টা পর আবার যে কা সেই হয়ে যায়। তার পর আমরা ধৈর্য হারিয়ে আমরা আমাদের
বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলি। ভগবান জানে যেদিন আমরা আমাদের বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলি
সেদিন সবচেয়ে কম খাবার খাই। আমাদের মনঃ ও সব থেকে সেদিন খারাপ হয়। আমারা এত কিছু
করার পর ও আমাদের সন্তান দের ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে পারি না। আজ পর্যন্ত এই রকম
কোনদিনও হয় নি যে, ম-বাবা বোঝাবার ফলে ছেলে-মেয়েরা বলেছে, হ্যাঁ বাবা আজ তুমি আমার
চোখ খুলে দিলে, আমি আর কোনদিনও দুষ্টুমি করব না। কিন্তু আমরা তাও ওই গুলোই করি।
আমরা দেখলাম
সন্তানদের উপদেশ দেওয়া, বোকা দেওয়া কিম্বা মারা কোনটাতেই তাদের ব্যবহারে পরিবর্তন
আনা সম্ভব নয়। নিশ্চয় অন্য কোন রাস্তা আছে সেটা কি? সেটাই আপনারা আমার এই পুরো
লেখটা থেকে জানতে পারবেন। সঙ্গে থাকুন কথা দিচ্ছি ভালো লাগবে।
আচ্ছা একবার
মনে করুন তো আমাদের ছোটবেলাতে আমাদের মা-বাবারাও আমাদের বোকা দিত, আমরা কি শুনতাম?
আমার মনে হয় না। তাহলে দীর্ঘ দিন ধরে আমরা একটা ভুল পদ্ধতি অবলম্বন করছি।
দেখুন আমদের
সন্তানরা তো এই রকম ছিল না। যখন সে এক বছরের ছিল, তখন তার একটা হাঁসি, আমার সারা
দিনের ক্লান্তি দূর করে দিত। এই কয়েক বছরে কি এমন হল, আমার সামনে সে আর মন খুলে
হাসে না। আগে আমি পেপার বা কোন বই পড়তে গেলে, সেই ঝাপিয়ে পরত, পড়ার জন্য, আমার
পকেটের কলম সে সবার আগে বের করে নিত। অর্থাৎ তার ভিতর টিউনিং ছিল লেখা-পড়া করার,
আমরাই ভুল টিউনিং করে সেটা নষ্ট করেছি। আমার সন্তানের ভিতর সততা পুরো মাত্রায় ছিল,
একদিন ঘুম থেকে উঠে বাড়ী ভর্তি লোকের সামনে সেই বলেছিল, ঠাম্মি-ঠাম্মি আমি না মার
গলা ধরে, মা-বাবার মাঝ খানে ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু সকালে উঠে দেখি, আমি সাইডে, পাপা
মার গলা ধরে শুয়ে আছে। কিন্তু এ ক বছরে কি এমন হল যে আমার সন্তান আমার কাছে অনেক
জিনিষ লুকাতে ও মিথ্যা বলতে শিখে গেল।
সন্তান তো
আপনার এত স্মার্ট যে আপনিই ভেবে দেখুন ওর বয়সে আপনি কতটা বুঝতেন আর ও কতটা বুঝে।
আপনার মোবাইলের জটিল এপ্লিকেশন গুলো যে গুলো আপনাকে আমাকে অনেক প্রচেষ্টার ফলে
শিখতে হয়, সেগুলো ওরা নিমেষেই আয়ত্ব করে নেয়, আমরা না পারলে ওদেরই ডাকতে হয়।
আপনার শিশু
কে এই বিশ্বে অদ্বিতীয় হওয়ার জন্য সমস্ত ভালো গুণ গুলো তার ভিতর দিয়ে আপনাকে
সৃষ্টি কর্তা তার শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়ে, আপনাকে সুযোগ দিয়েছিল, সৃষ্টি কর্তার
সৃষ্টিতে সাথী হওয়ার জন্য, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা আমাদের উপহারের প্যকেটটা
না খুলেই, আমাদের ইচ্ছা মতো ব্যবহার করা শুরু করে দিই।
আমাদের
সন্তানদের ভেতর ঈশ্বরের দেওয়া টিউনিং কি করে নষ্ট হয়ে যায়?
আমাদের
সন্তানদের ভেতর ঈশ্বরের দেওয়া সব ভালো গুণ গুলো আমরা আমাদের অজান্তে কি করে নষ্ট
করে ফেলি?
আজকের
পরিবারের চাল চিত্রঃ-
বাবা সারা দিনের
ক্লান্তির পর সন্ধ্যায় অফিস থেকে বা দোকান থেকে বাড়ি ফেরে, স্ত্রী দরজা খুলে, মুখটাও খোলে, দরজা তো বন্দ হয়ে যায়, মুখ আর বন্দ হয় না। আহঃ তুমি এলে, আমি তোমার
কথাই ভাবছিলাম, জানো তোমার রাজপুত্র আজ কি করেছে, সারা দিন একদম পড়তে বসে নি, সারা
দিন শুধু ডিসকভারি আর কার্টুন, এই চলল কিছুক্ষন। যতক্ষণ না বাবা ছেলেকে একটু শাসন
করে দিচ্ছে, ছেলেও মিন মিন করে বলার চেষ্টা করল, না বাপি আমি আমার সব পড়া করে
রেখেছি, মাও স্টার জলসা দেখছিল, আজ আমার জন্য দেখতে পায় নি তাই, এবার দুজনে মিলে,
এই চোপ, আবার বড়দের মুখে মুখে কথা, খালি তর্ক করে। যাও পড়ার ঘরে গিয়ে পড়তে বস।
বাবা হাত পা
ধুয়ে এবার এসে বসল। মা বলল তুমি বস গো আহা তোমার মুখটা দিনে দিনে কেমন শুকিয়ে
যাচ্ছে, যাই আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসি। এবার বাবা একটা বিশেষ আসনে বসল।
আজকাল চারিদিকে আসনের রমরমা নাক টেপা, চোখ টেপা মুখ টেপা কত কি, আমি যেটার কথা
বলছি সেটা অবস্য রিমোর্ট টেপা, আমি নাম দিয়েছি টিভি আসন। যে দেখছে তার কি মনঃযোগ,
দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। বাবা তখন টিভিতে দেখছে, একটা অষ্টাদশী স্লিম, বঙ্গ ললনার
হাতে মাউথ, সে বলছে, আজ বানতলাতে একটা লাল রঙের কুকুর চারটা আলাদা-আলাদা লোককে কামড়ে
দিয়েছে। তার মধ্যে একটা বুড়া, একটা যুবক ইত্যাদি। এবার যাদের কেটেছে তাদের
সাক্ষাৎকার, আপনাকে কুকুর কেটেছে খুব দুঃখ জনক আপনার কেমন লাগছে? এবার সরকারের কি করনীয়। কুকুরের প্রকারভেদ, বিশেষজ্ঞ বলছেন কুকুর
কখন কাটে। কুকুর কাটলে কি করা উচিৎ। ১৪টা ইনজেকশন কিভাবে নেওয়া উচিৎ।
ততক্ষণে
গিন্নী চা বানিয়ে এনেছেন, কাজের মেয়েও এসেছে। নামটা আমরা কত ভালো দিয়েছি কাজের
মেয়ে, যেন আর সব বিনা কাজের লোক। ও সোমা তুই এলি, যা যা একটু দেখ না সোনা, বেসিনের
নিচে বাসন গুলো পরে আছে, একটু ধুয়ে দে, ও হ্যাঁ গ্যাসের ওভেনটা একটু ভালো করে মুছে
দিস বোন, আমি তোর দাদার সঙ্গে একটু বসি, সারা দিন লোকটার অনেক ধকল যায়। কাজের
লোকদের সঙ্গে কি মিষ্টি ভাবে কথা বলে, আমাকেই মাঝে মাঝে আশ্চর্য হতে হয়, সবার সঙ্গে
ওইভাবে বলতে পারলে আর সমস্যাই থাকত না।
এবার
রিমোর্টের কন্ট্রল মেডামের হাতে। বাচ্চার মাইন্ডে ছোট থেকে একটা পরিষ্কার মেসেজ
যাওয়া শুরু করে, পাপা ফ্রি দেন টিভি, মামা ফ্রি দেন টিভি। কিন্তু মুশকিলটা হল।
পাপা ফ্রি এক ঘণ্টা, মাম্মা ফ্রী আধা ঘণ্টা, আপনার সন্তান ফ্রী ইচ্ছামতো। আমি তো
অনেক ছেলে মেয়েকে দেখেছি, তারা তাদের মা-বাবাকে বলে, তোমারা ঘুমিয়ে যাও। আমি টিভি
অফ করে দিব, আমার কাজের একটা জিনষ দেখছি।
আজকাল তো
ফেসবুকের কারনে ছেলে-মেয়েরা ছোট থেকে দেখছে মা-বাবা শুধু লাইক আর কমেন্ট দেখছে
কিছুক্ষন পর পর, কোন সময় নিজের ছবি, কোন সময় সোনার ছবি নয়তো বাড়ির কুকুরটার ছবি।
আমরা বুঝতে পারছি না এগুলো থেকে বেশী দরকারি আমার সন্তানকে আরও বেশী সময় দেওয়া তার
ইচ্ছে মত, কারন তার জন্য ভগবান আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
আমাদের
সন্তানরা আমাদের কথা শোনেনা কেন?
আমরা যখন
আমাদের সন্তানদের বলি, দেখো সোনা খেলনা নিয়ে দুষ্টুমি করো না, দু-জনে মিলে মিশে
খেলা কর। তখন সে ভাবে "আমি খেলনার" (আমাদের বাচ্চারা আমাদের জন্য খেলনা) জন্য তোমরা দুজন সব সময় ঝগড়া কর, (আমাদের বাচ্চাদের যত ভালো কিছু তা আমরা নিতে চাই, দেখতে হবে না ছেলে কার, খারাপ কিছু হলে বলি ওর মামার মত) আর আমাকে বলছ
মিলে মিশে থাকতে। আচ্ছা আপনারা একবার ভেবে দেখবেন, আপনাদের মা-বাবাদের আজকের যুগ
অনুসারে আপনারা জ্ঞানবান মনে করেন। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে প্রণাম করা ছাড়া আমাদের জীবনে আর
তাদের কোন মহত্ব দিই না। কারন আজকের সমাজ পরিস্থিতিতে, আমাদের সমস্যার সমাধানে
তাদের চিন্তা ভাবনা অচল তাই, কারন যুগের সঙ্গে তারা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে নি
তাই। চিন্তা করবেন না বন্ধু আমাদের সন্তানরাও আমাদের তাই ভাববে যদি আমরা ক্রমাগত
নিজেদের আপডেট না করি। মানুষ যতক্ষণ অব্দি জানে যে লোকটা আমার থেকে জ্ঞানী ততক্ষণ
অব্দই তার কথা শোনে, যেই মুহূর্তে মনে হয় যে সে লোকটার জ্ঞান সন্দেহ জনক, এযুগে
চলবে না, সেই মুহূর্তেই তার কথা শোনা বন্দ করে দেয়। আমাদের ছেলে মেয়েরাও আমাদের
সমন্ধে এটাই ভাবে, যে তোমাদের কথা ওতই ঠিক হত তাহলে তোমরা জীবনে অনেক উন্নতি করতে
পারতে। তোমাদের অবস্থা আজ এই হত না।
সমাধান কি?
মুশকিলটা হল
কি দাদা জানেন? আপনাকে যদি একটা পেঁচার মাটির মূর্তি বানাতে বলি, আপনি বলবেন শিখতে
হবে। আপনি একটা জীবন্ত জ্ঞান বান সফল ব্যাক্তিত্ব তৈরী করবেন, আপনি শিখবেন না।
পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল কাজ এবং শ্রেষ্ঠ কাজ ছেলে-মেয়ে মানুষ করা এটা যে শিখতে হবে,
আমরা ভাবতেই পারি না। কলকাতায় আমার ম্যানেজার মুখারজী বাবু তার ইন্টার্ভিউয়ের দিন
একটা কথা বলেছিলেন, সেটা আমি আজও ভুলতে পারি না, উনি বলেছিলেন We are The Pure Bengali People Sir, we need no any motivation or training. We are the
self-motivated and self-trained people. দিল্লিতে আমার গুরুর জন্য মোটিভেশন প্রোগ্রামের তৈরী করছিলাম, তখন এক ব্যাক্তি বলেছিলেন, জনাব হম তো খুদা কি আখরি সন্তান হেঁ, হমে কোই মোটিভেশন কি জরুরত নহি। ভাবটা এমন যেন, খুদা নে ফুরসত সে বানায়া থা, ছুট্টি কা দিন বানায়া থা।
এক মাত্র সমাধান
আমি মনে করি সঠিক অভিভাবকত্বের জন্য আপনারা বিভিন্ন ট্রেনিং ওয়ার্কশপ এটেন্ড করুন। আপনি একবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার সন্তানের জন্য আপনি Below the neck কতটা খরচ করছেন আর Above the neck কতটা খরচ করছেন। Below the neck যা খরচ করবেন তা পাবেন আপনার পায়খনার টেংকিতে কিম্বা
ডাস্টবিনে কিন্তু Above the
neck
যা খরচ
করবেন তা আপনার পরিবারের সম্পর্ক গুলো মধুর করবে, ও সফল করবে।
জীবন
নির্মাণের বিভিন্ন বই পড়ুন। এই ধরনের ট্রেনিং- ওয়ার্ক শপ এ যোগ দিন। যখন কোন
ট্রেনার কোন প্রোগ্রাম তৈরী করে তার পিছনে থাকে তার সারা জীবনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা,
“জীবনে চলার পথে শিখে নেওয়া জীবনের কঠিন পাঠ”।
আপনাদের
সকলের জীবনে নেমে আসুক, সুখ, সম্বৃদ্ধি, ঐশ্বর্য, মধুরতম পারিবারিক সম্পর্ক।
ব্যক্তি নির্মাণ হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে, জেলার এক জনে, রাজ্যের এক জন, দেশের
বরেন্য হয়ে, দেশ মাতৃকাকে শক্তিশালী করুন। আপনি দেশের সম্পদ হয়ে উঠুন।
প্রতিনিয়ত
আপনাদের সকলের শুভ কামনায় রথীন ঘোষ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন