বৃদ্ধ বয়সে যৌন স্বাস্থ্য: একটি মনস্তাত্ত্বিক পর্যালোচনা ও সাইকোলজিক্যাল পরামর্শ
বৃদ্ধ বয়সে যৌন স্বাস্থ্য: একটি মনস্তাত্ত্বিক পর্যালোচনা ও সাইকোলজিক্যাল পরামর্শ
রথীন ঘোষ | Counsellor, Clinical Psychotherapist & Clinical Sex Therapist
(ফ্রি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা অভিযানের অংশ)
আমাদের সমাজে যৌনতা নিয়ে আলোচনা যেন একটি নিরব নিষেধের বেড়াজালে বন্দী। এই নিষেধাজ্ঞার প্রাচীর সবচেয়ে পুরু হয় যখন আলোচনার বিষয় ‘বৃদ্ধ বয়সে যৌন জীবন’। অথচ বাস্তবতা হলো, যৌনতা মানুষের জীবনের একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিক—তা কেবল যৌবনে নয়, বৃদ্ধ বয়সেও। শারীরিক ঘনিষ্ঠতা, ছোঁয়ার চাহিদা, ভালবাসা প্রকাশ—এই সমস্ত কিছুই মানুষের মানসিক সুস্থতা এবং আত্মসম্মানবোধের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যৌন জীবনের ধরণ ও গতি পরিবর্তিত হয় ঠিকই, কিন্তু তার প্রয়োজনীয়তা মুছে যায় না। এই লেখায় আমি আলোচনা করব বৃদ্ধ বয়সে যৌন স্বাস্থ্যকে ঘিরে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা, মানসিক প্রতিবন্ধকতা, শরীর-মন পরিবর্তন, এবং প্রয়োজনীয় সাইকোথেরাপিউটিক পরামর্শ।
বয়স বাড়লেই কি যৌনতা শেষ?
এই প্রশ্নটাই সমাজে সবচেয়ে বেশি ছুঁড়ে দেওয়া হয়। একদিকে যেমন পুরুষরা হীনমন্যতায় ভোগেন ‘ক্ষমতা কমে যাচ্ছে’ এই ভেবে, অন্যদিকে নারীরা সমাজের চাপে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের চাহিদা গোপন করেন। অথচ গবেষণা বলছে—
৬০ বছরের পরেও অনেক মানুষ যৌন চাহিদা ও আনন্দ অনুভব করেন;
শারীরিক ঘনিষ্ঠতা মানেই যৌন মিলন নয়, বরং স্পর্শ, আলিঙ্গন, যৌথ ঘুম, ও চোখের ভাষাও এখানে বড় ভূমিকা রাখে;
মানসিকভাবে যারা নিরাপদ বোধ করেন এবং যাদের সঙ্গীর সঙ্গে গভীর বন্ধন আছে, তারা অনেক বেশি যৌনভাবে সক্রিয় থাকেন।
শরীর ও যৌনতার পরিবর্তন: মানসিক প্রস্তুতি জরুরি
পুরুষদের ক্ষেত্রে:
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়,
ইরেকশনের জন্য বেশি সময় লাগে,
ইজাকুলেশনের পর ক্লান্তি বেশি হয়।
নারীদের ক্ষেত্রে:
মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন হ্রাসের ফলে যোনির আর্দ্রতা কমে যায়,
যৌন মিলন ব্যথাদায়ক হতে পারে,
কিন্তু মানসিক উদ্দীপনা অনেকাংশেই অটুট থাকে।
এই শারীরিক পরিবর্তন স্বাভাবিক এবং এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে মানসিকভাবে গ্রহণ করতে শেখা উচিত। বিশেষ কিছু ওষুধ, হরমোনাল থেরাপি, লুব্রিক্যান্ট ইত্যাদি ব্যবহার করেও এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক চাপে আত্মগোপন
বয়স্ক মানুষদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এমন—“এই বয়সে এসব কথা বলাটা লজ্জার।”
এই সংস্কৃতি তৈরি করে অন্তর্দ্বন্দ্ব, আত্মগ্লানি ও দাম্পত্য দূরত্ব।
কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেন—“আমার সঙ্গী কি আমাকে আর আগের মতো চায় না?”
এই ভুল বোঝাবুঝি ধীরে ধীরে মানসিক বিষণ্ণতা, হীনমন্যতা ও দাম্পত্য ভাঙনের দিকে ঠেলে দেয়।
উত্তরণের রাস্তা: বোঝাপড়া, স্বীকৃতি ও থেরাপি
১. সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করুন: আপনি কী অনুভব করছেন তা জানালে ভুল বোঝাবুঝি কমবে।
২. নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন: যৌন মিলনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও ছোঁয়ার সম্পর্ক।
3. বিশেষজ্ঞর সাহায্য নিন: যৌন থেরাপিস্ট বা সাইকোথেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা করলে আপনি নিজের শরীর ও মনকে নতুনভাবে বুঝতে পারবেন।
4. দাম্পত্য পুনর্জীবন থেরাপি: বহু দম্পতির ক্ষেত্রে যৌনতার বাইরে একসঙ্গে সময় কাটানো, স্মৃতি রোমন্থন, একসঙ্গে হাঁটতে যাওয়া ইত্যাদি জিনিস সম্পর্কের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনে।
পরিশেষে: যৌনতা মানে কেবল যৌন মিলন নয়, এটি ছুঁয়ে থাকা, অনুভব করা ও জীবনকে ছুঁয়ে দেখা
বৃদ্ধ বয়সে যৌনতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে ভাবতে শেখা আমাদের মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এটা লজ্জার নয়, বরং নিজের প্রতি সম্মানের প্রতীক। সঙ্গীর সঙ্গে একসঙ্গে বার্ধক্য উপভোগ করার মধ্যে আছে নতুন এক সৌন্দর্য, নতুন এক প্রেম—যেখানে যৌনতা মানে কেবল শরীরী চাহিদা নয়, বরং একে অপরের জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠার গভীর অনুভব।
#SeniorSexualHealth
#RathinGhoshWrites
#MentalWellnessInOldAge
#SexTherapyForSeniors #everyone
ফ্রি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা অভিযান
আপনি যদি বার্ধক্যে মানসিক বিষণ্ণতা, দাম্পত্য দূরত্ব, যৌন অস্বস্তি বা আত্মমর্যাদাহীনতায় ভোগেন, আমাদের ফ্রি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা অভিযান থেকে সাহায্য নিন।
রথীন ঘোষ
Counsellor, Clinical Psychotherapist, Clinical Sex Therapist
বিনামূল্যে প্রাথমিক বিশ্লেষণ ও থেরাপির রূপরেখা প্রদান করা হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন