আপনি ও আপনার অবচেতন মনের শক্তি
আপনি ও আপনার অবচেতন মনের শক্তি – রথীন ঘোষ
প্রতিটা মানুষের দুটো করে মন আছে, একটি চেতন মন ও অপরটি অবচেতন মন, চেতন মন আমরা সবাই জানি, কিন্তু এবাদেও একটি মন আছে, যাকে বিজ্ঞান অবচেতন মন বলে। এই অবচেতন মনই মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রন
করে। মানুষের জীবনে ভালোমন্দ সব কিছুর জন্য
দায়ী অবচেতন মন, এই অবচেতন মন
কে যদি মানুষ নিয়ন্ত্রন করতে শিখে যায় তাহলে, মানুষের জীবনে সমস্ত সুখ ও সাচ্ছন্দ
সম্ভব।
আপনি যদি অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রন শিখে যান, তাহলে আপনার জীবনে কোনো অভাব থাকবে
না। আপনার জীবনের সমস্ত কাজগুলো আপনার ইচ্ছামতো
হবে। আপনার জীবনে যখন যা দরকার তা স্বাভাবিক ভাবেই হবে।
মানুষ সারা জীবন শুধু কষ্ট, দুঃখ, দারিদ্র, অভাব ভোগ করার জন্য এই পৃথিবী তে আসেনি। এই বিশ্বের প্রতিটা মানুষ ইশ্বর পুত্র। সৃষ্টি কর্তা তার নিজের সন্তানদের কোন সময়ই দুঃখ কষ্ট দেন না। আমরা যখন দুঃখে থাকি তখন আমাদের চেয়ে হাজার গুণ বেশী আমাদের ভগবান দুঃখে থাকেন। তাই আমাদের সব সময় হান্সি-খুশি থাকা উচিৎ।
চেতন মনকে আমরা সকলেই বুঝতে পারি। জাগ্রত অবস্থায় আমরা যে কাজ সমস্ত করি তা সব চেতন মন দিয়ে। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন ও আমাদের মন সচল থাকে। সে আমাদের স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু আমাদের শরীর ঘুমিয়ে থাকে, তার আশে পাশে কি হচ্ছে সে জানে না। আমরা রাতে প্রচুর স্বপ্ন দেখি, আমাদের শুধু শেষের স্বপ্নটাই মনে থাকে। আমরা সারা দিন যা ভাবি তাই আমরা স্বপ্নে দেখি। আমরা যদি সারাদিন খারাপ ভাবি, রাতে স্বপ্নে আমরা তাই দেখি। আমরা যদি সারা দিন ভালো ভাবি তাহলে রাতে আমাদের ভালো স্বপ্ন হয়।
স্বপ্ন দেখার কাজটা যেহেতু অবচেতন মনের, তাই অবচেতন মনে সেই জিনিষ গুলোর প্রোগ্রামিং হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমাদের জীবনে সেই ঘটনা গুলোই ঘটতে থাকে।
এই অবচেতন মনের ব্যপারটা আমি আর একটু বিশদে বলছি। এই আমি আপনাকে এখন বললাম আপনি চোখ বন্ধ করে, আপনার মায়ের কথা ভাবুন, আপনি ভাবলেন, কি হল আপনার মানস পটে আপনি আপনার মায়ের ছবি দেখতে পেলেন। এবার আমি বললাম আপনি চোখ বন্ধ করুন, এবার আপনি বাঁদরের কথা ভাববেন না। কি হল ? এবারও বাঁদরের ছবি দেখলেন। আমি কিন্তু আপনাকে বাঁদরের কথা ভাবতে মানা করে ছিলাম, কিন্তু অবচেতন মন বাঁদরের ছবি দেখিয়ে দিল।
অবচেতন মনের এই একটা মুস্কিল সে হ্যাঁ বা না বোঝে না। আপনি যেই জিনিষের কথা বলবেন, আপনি না চাইলেও তাই আপনাকে দেখাবে। আপনার অবচেতন মন যা আপনাকে দেখাবে তাই আপনার জীবনে ঘটে যাবে।
এই অবচেতন মনের শক্তি কে আমরা বিভন্ন ভাবে কাজে লাগাতে পারি। পড়াশুনার ক্ষেত্রে খুব ভালো মত কাজে লাগানো যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ছয় ঘণ্টা আগে মানুষ যা যা করে তাই তার অবচেতন মন সারা রাত ভাবতে থাকে। বিশেষ করে এক ঘণ্টা আগে যা করে, ঘুমাবার পর অবচেতন মন সেটাই ভাবতে থাকে। তাই আমি আমার সেমিনারে জোর দিয়ে বলি রাতে ঘুমাবার ছয় ঘণ্টা আগে এমন কিছু কাজ করা উচিৎ যা আপনি হতে চান। বিশেষ করে এক ঘণ্টা আগে।
আমার মেমারী টেকনিক অনেক পিছিয়ে পড়া ছাত্রেরও জীবন ভালো করে দিয়েছে। সারাদিন যা পড়াশুনা করলেন রাতে ঘুমিয়ে চোখ বন্ধ করে সেই পড়াগুলো ভাবুন। দেখুন সব পর পর মনে পড়ে যাবে। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলে, উঠে বই বা নোট খাতা দেখে নিবেন। দেখবেন আপনি ঘুমিয়ে যাবেন কিন্তু আপনার অবচেতন মন সারা রাত পড়াশুনা চালিয়ে যাবে। সকালে দেখবেন আপনার পড়া মুখস্ত হয়ে গেছে। আপনি নিজেই খুব আশ্চর্য বোধ করবেন, যে আপনার ভিতর এই আশ্চর্য শক্তি কোথায় ছিল।
অবচেতন মনের আর একটা সুন্দর ব্যবহার আপনি পাবেন সকালে ঘুম থেকে ওঠার ক্ষেত্রে। রাতে ভেবে ঘুমান সকালে কটায় উঠবেন ও উঠে কি করবেন। কোন একটা কাজ ভেবে রাখবেন। আপনি নিজেই আশ্চর্য হবেন যে, আপনি ঠিক আপনার দেওয়া সময়ে উঠে পরেছেন। কোন এলারমের দরকার হয় নি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন