আপনার বাড়ির দরজায় আধুনিক উন্নয়নের রকেট দাড়িয়ে আছে, সিদ্ধান্ত আপনি নিন
আপনার বাড়ির দরজায় আধুনিক উন্নয়নের রকেট দাড়িয়ে আছে, সিদ্ধান্ত আপনি নিন – রথীন ঘোষ
আমার ঠাকুরদা কোনোদিন ইলেক্ট্রিক ফ্যানের হাওয়া খান নি তার যুক্তি ছিলো, ফ্যান হলো বাতের অসুখের ঘর। ইলেক্ট্রিক ফ্যানের হাওয়া খেলে বাতের
অসুখ হয়। আজ তিনি নেই। আজ আমার বাবা ৭৩ বছর বয়স, প্রতি গরমে গোটা শরীরে ফস্কা পড়ে যায়। ৩ খানা ফ্যান নিয়ে প্রতি দিন হাওয়া
খেয়ে গরম কমাবার চেষ্টা করেন। এ-সি লাগানোর কথা বল্লে বলেন, এ-সি হলো অসুখের ঘর। তিনি এ-সি কোনোমতে লাগাতে দিবেন না।
আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালি এই এক সমস্যা। আমাদের নতুন টেকনোলজি বা আধুনিকতা কে বুঝতে ৫০ বছর দেরী হয়ে যায়।
এই ধরনের ঘটনা আমাদের জীবনে
অনেক ক্ষেত্রেই আছে। কয়েকদিন আগে আমার মামীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তার দুই ছেলে রাজা ও রানা
এক ভাই ফিজিক্স ও এক ভাই কেমিস্ট্রি এম এস সি, রানা হাই স্কুলে পেয়ে গেছে চিন্তা নেই,
তবে রাজা এখনও প্রাইমারী স্কুলে করে যাচ্ছে, মামী
বললেন রাজার একটা ভালো চাকরী হচ্ছিলো যেতে দিলাম না। আমি বল্লাম কেনো? মামী বললেন
প্রাইভেট কোম্পানি তো তাই। মামী কে বললাম, প্রাইভেট কোম্পানি ই তো ভালো,
সরকার তার কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না, বলে
প্রতি মাসে ৪৯ শতাংশ কম বেতন দিচ্ছে, অর্থাৎ প্রতি মাসে ৪৯ শতাংশ
রক্ত চোষন করে যাচ্ছে। এই একটা ব্যাপারে সব সরকার এক রকম আগের বাম সরকার ২৫-৩০ শতাংশ রক্ত
প্রতি মাসে শষোন করে লাল সেলাম দিয়ে গেছে, এই সরকার তো পারলে
কর্মচারীদের ঝাটার বারি দিতেও দেরী করবে না। মামী বললেন না প্রাইভেট কোম্পানি
তে প্রচুর কাজ, খুব খাটিয়ে নেয়। সরকারী চাকরী তে থেকে মামা কোনোদিন কম কাজ করেছে, তিনি বললেন
কোনো দিনও না, রাত ৮-১০ টার আগে অফিস থেকে
আসতে পারে নি। বাড়িতে থাকলে, বাড়িটাই অফিস হয়ে যেত। এবার বলুন সরকারি চাকরী ভালো
না প্রাইভেট কোম্পানি। সরকারী চাকরী তে একজনকে কে দিয়ে ৩ জনের কাজ করালেও আপনাকে
এক জনেরই পয়সা দিবে। আপনি যত ভালো কাজই করুন না কেনো আপনার নিয়োগ কর্তা আপনাকে
কোনো পুরুস্কার দিতে পারবে না। আবার আপনি যত খারাপ ভাবেই কাজ করুন না কেন আপনার নিয়োগ
কর্তা বা অফিস বস আপনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নিতে পারবে না। এর পর মামী বললেন, নানা ওইসব
কোম্পানি তে কাজ করলে বিদেশে যেতেও হতে পারে। আমি এবার আকাশ থেকে পড়লাম, যাঃ বাঙ্গালী
এবার ১৫০ বছর পিছিয়ে গেলো, রাজা রাম মোহন রায়, মাইকেল মধুসুদন এদের যুগে বিদেশ যাওয়া পারিবারীক বাধা ছিলো, আজও তাই। মামি বললেন মরার সময় দেখতে তো আসবে, আমি মানুষ
মরলে বুকের উপর কি রাখে, মামী বললেন গীতা, আমি বললাম গীতা তে লেখা আছে মানুষ মারা গেলে এই শরীরে কিছু নেই, তাই হয় গীতা কে মানুন নয় শরীর কে মানুন। তার পর বললাম ছেলে বিদেশ গেলে
ছেলের সঙ্গে আপনারাও বিদেশে যেতে পারেন ওখানেই থেকে যেতে পারেন, ওখানকার রাষ্ট্রের
ব্যাবস্থা অনেক ভালো। মামী বললেন বলিস কি বাড়ী ছেড়ে যাওয়া যায়, আমি বললাম
ঠিক ই জাওয়া যায় আর একটা ৭১ এর যুদ্ধ হলে তখন দেখবেন, যেতে একটুকও
দেরী হবে না। আজ রাধা গোবিন্দের মন্দির, রথ,
জমিদারী, সোনা গয়না কিছুই নেই যা আছে শুধু এই ৩
তলা বাড়িটা, ও শহরের উপকন্ঠে ২টো প্লট। যাই মামী নিজের মতেই স্থির
থাকলেন আমি বুঝাতে পারলামনা, ঠিক যেইভাবে আমার বাবকেও এ-সি র ব্যাপারে বোঝাতে পারিনি, আমার ঠাকুরদাকে ফ্যানের
ব্যাপারে বোঝাতে পারিনি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন