আমাদের বাচ্চারা কি ভাবে?


আমাদের বাচ্চারা কি ভাবে?
আমাদের ব্যবহারের দ্বারা আমাদের সন্তান অনেক কিছু শিখে,
ওদের চিন্তা ভাবনা দ্বারা আমাদের অনেক কিছু শিখতে হবে
-       পরীক্ষিৎ জোবনপুত্রা


আমাদের বেশির ভাগ সমস্যা মানুষের ব্যবহার সমন্ধিত। যখন অন্য লোকেদের ব্যবহার আমাদের ইচ্ছা ও ভাবনার বিপরীত হয়, তখন আমাদের জন্য সমস্যা হয়। প্রতিটা সমস্যা আমদের জন্য অনেক দুঃখ ও বেদনা নিয়ে আসে। হোমওয়ার্ক না করা, মিথ্যা কথা বলা, কিছু ভাঙচুর করা, দুষ্টুমি করা, কথা না শোনা, বাচ্চাদের এধরনের ব্যবহারে আমদের মন খারাপ হয়ে যায়। এই রকম পরিস্থিতিতে আমরা বাচ্চাদের আদর করে ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে, ধামক দিয়ে, শাস্তি দিয়ে আমরা নিজেদের দুঃখ আমাদের সন্তানের সামনে অভিব্যক্ত করি, কিন্তু...
অনেক সময় আমদের ব্যবহার আমাদের বাচ্চাদের ইচ্ছা বা অপেক্ষার বিপরীত হলে, আমাদের সন্তানরা ও দুঃখ পায়। আমাদের ব্যবহার নিয়ে বাচ্চাদের মনে অনেক প্রশ্ন ও ভাবনা উৎপন্ন হয়। এই ছোটো বাচ্চাকে তার ভাবনা ও মত প্রকাশের আমরা কোনো সুযোগ দিই না, কিন্তু তার মাথায় কোনো না কোনো ভাবনা চলতেই থাকে। সফল মা-বাবা হিসাবে আমাদের সন্তানদের ভাবনা গুলোকে জানা, বুঝা, ভাবা ও স্বীকার করা অত্যন্ত আবশ্যক।
বাচ্চারা কি ভাবে?
এখানে বাচ্চাদের ভাবনাগুলোকে প্রশ্ন আকারে লিখছি, বাচ্চাদের এই প্রশ্ন গুলোকে নিয়ে আপনাকেও ভাবতে হবে।
আমার জন্য কেন কারও সময় হয় না?
# মা তুমি তো সারাদিন বাড়ির কাজ কর, পেপার পড়, টিভি দেখ, পার্টিতে যাও......
আমি তোমাকে আমার সাথে খেলতে বললে তুমি বল যে, “বেটু্‌... বার্বিডোলের সাথে খেলা কর, যাও... আমার লক্ষ্মী সোনা ... বলে চুপ করিয়ে দাও।
মা, দিদিকেও কি তুমি এমন ভাবে বলতে? ও তোমার সাথে না খেলেই বড় হয়ে গেলো? তাহলে আমিও কি তোমার সাথে না খেলে, তোমার ভালোবাসা না পেয়েই বড় হয়ে যাব? বল না মা তুমি আমার সাথে কবে খেলবে?
# বাবা তোমার অফিস একটা নির্জীব, তোমার অফিস বস তোমার কোন আত্মীয় হয় না, ওরা তোমায় বুড়ো বয়সে রিটায়ার করে দিবে, তাও তুমি তোমার সারাদিন অফিসে সময় ব্যয় কর।
তোমার ভালোবাসা আমার প্রাণ, আমি তোমাকে খুব চাই, তোমার বুড়ো বয়সেও আমি তোমার  সঙ্গে থাকব, তাও তুমি আমার সঙ্গে খেলার জন্য সময় বের করতে পার না?
# মা-বাবা তোমরা তোমাদের চাকরী-ব্যবসা ইত্যদিতে ব্যস্ত থাক তার জন্য আমাদের বেবীসীটার বা হোস্টেলে পাঠিয়ে দাও। এইরকম করে তোমরা আমদের শৈশব ও ভালোবাসা দুটোই কেড়ে নিচ্ছ। কিন্তু......
তোমাদের বৃদ্ধ বয়সে আমরাও যদি চাকরী-ব্যবসা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকার কারনে, তোমাদেরও যদি বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিই, তখন তোমরা বলবে দেখো আজকালকার ছেলেদের, নতুন যুগের হাওয়া লেগে গিয়েছে, নিজের মা বাবাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু মা-বাবা এই যুগের রঙ ও হাওয়া তোমরাই আমাদের লাগিয়েছ। প্লীজ বাবা ... তুমি আমার জন্য একটু সময় বের কর...।
# আমি কোন দিন তোমায় জিজ্ঞেস করেছি তুমি কে?
ব্যবসায়ী, উদ্যোগপতি বা শিল্পপতি?
ইঞ্জিনিয়ার বা অধিকারী?
উকিল বা ডাক্তার?
কিন্তু এই রকম কিছু হওয়ার অভিমানে তোমরা ভুলে যাও, যে তোমরা আমদের মা-বাবা।
তুমি যেভাবে একজন সফল ডাক্তার, বিজনেসম্যান হওয়ার জন্য ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছ, যেমন আমাকে পরীক্ষায় বেশী নম্বর এনে ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র হতে বল, ঠিক সেভাবেই তুমিও আমাকে বেশি সময় দিয়ে একজন সফল মা-বাবার পরিচয় দাও না?
জাগো...... অভিভাবক জাগো......
# আজ খাবার খাওয়ার সময় আমার থালা থেকে ভাত পরে গিয়েছিল যার জন্য তুমি আমাকে ধামক দিলে।
আচ্ছা বাবা তুমি যখন ছোটো ছিলে, তোমার কাছ থেকে কোন জিনিষ পরে যেত না? তুমি আমাকে ধামক দেওয়ার বদলে বোঝালে কি হোত?
# আমার স্কুল থেকে আসতে দেরী হল... তুমি জিজ্ঞেস করলে দেরী কেন হল?
আমি সত্যি কথা বললাম যে স্কুল ছুটির পর বন্ধুদের সাথে খেলছিলাম।
(কারন আমি মিথ্যা কথা বলতে পারতাম না) তখন তুমি আমাকে কত ধামক দিলে মা, তুমি আমাকে বাজে ছেলেও বললে, তুমি আরও বললে আমি বখে গেছি... ঠিক আছে কোন ব্যপার নেই।
দ্বিতীয় দিন আবার দেরী হলে আমি তোমায় বললাম, স্কুল ছুটির পর বন্ধুরা মিলে “স্কুল কুইজ” এর প্রস্তুতি করছিলাম, (মা মিথ্যা বলতে তুমিই শেখালে মা) তখন তুমি আমায় বললে, সোনা আমার, ছেলের মুখটা শুকিয়ে গেছে, যা বাবা হাত-মুখ ধুয়ে আয়, খেয়ে নে, আজ তোর খুব পরিশ্রম হয়েছে।
যেদিন তুমি বুঝতে পারলে যে, আমি স্কুল কুইজ এ অংশ গ্রহণ করিনি, সেদিন তুমি আমার ওপর খুব রেগে গেলে, তুমি জিজ্ঞেস করলে যে আমাকে মিথ্যা কথা বলতে কে শেখাল।
কিন্তু মা আমার, সত্যি কথা আমি কিভাবে বলতাম, যদি বলতাম তুমি শিখিয়েছ তাহলে তুমি আমায় মারতে, মা তুমি আমায় বল না, তুমি আমায় ধামক দেওয়া, বকা দেওয়া, মারা কবে বন্ধ করবে।
# মা-বাবা আমার ভাবনা গুলো জেনে যদি তোমরা দুঃখ পাও তাহলে ক্ষমা কর। কিন্তু তোমরা আমায় ধামক দাও কেন? বোকা দাও কেন? কথা বলা, খেলা, দোউড় ঝাপ করা আমদের স্বভাবিক প্রবৃতি, আমরা শুধু এইটুকুই করতে চাই।
তোমরা সবাইকে শুধু বল যে, আমি খুব দুষ্টু সারাদিন শুধু দুষ্টুমি করিকিন্তু এটা সঠিক না, যখন আমরা তোমাদের সঙ্গে খেলতে পারিনা, কথা বলতে পারি না তখন আমরা দুষ্টুমি করি।
দুষ্টুমি করে, বদমাইশি করে আমরা তোমাদের ধ্যান আমাদের দিকে আকর্ষন করতে চাই। আমরা বুঝতে পারি না যে আমাদের দুষ্টুমির পরিবর্তে তোমরা আমাদের ধ্যান দিবে না ধামক দিবে। (বাচ্চারা যখন দুষ্টুমি করে, তখন তাদের দরকার আপনার ভালোবাসার উষ্ণতা। সে দুষ্টুমি করে আপনাকে সিগন্যল দেয় যে, আপনি আপনার কর্তব্যে অবহেলা করছেন। আপনি আপনার কর্তব্য করার বদলে বাচ্চাকে ধামক দিচ্ছেন, মারছেন, ছোটো বাচ্চারা কতটা সমঝদার হবে, আর আমরা সমঝদারের পুতুল কতটা নাসমঝ।)
এসো না মা আমার, বাবা আমার, আমাদের মতো হয়ে যাও না, প্রাণ খুলে হাসো ঠিক আমাদের মত, আমাদের সাথে খেলো, ও হ্যাঁ তোমাদের এই ধামক টামক কবে বন্দ হবে, বল না পাপা, বল না মা.... বল...

জাগো……।। অভিভাবক জাগো………
আমাকে বার বার বোকা দাও কেনো?
# সন্ধ্যায় টিভি দেখার সময় মা তুমি আমায় বার বার বোকা দিচ্ছিলে
আর বলছিলে পড় পড় এই ভাবে টিভি দেখলে ডাক্তার হতে পারবি না
তোমার কথা ঠিক মা, টিভি দেখে ডাক্তার হওয়া যাবে না, কিন্তু মা ডাক্তার তো টিভি দেখতে পারবে মা, তাহলে ডাক্তার দেখতে পারলে আমি কি অপরাধ করলাম মা তুমিও তো সন্ধ্যায় সব কাজ ছেড়ে সিরীয়াল দেখতে বসে যাও, সিরীয়াল দেখার পরই সব কাজ কর বাবা বাড়ি আসলে সিরীয়াল চললে উনাকে নিজেই খাবার বের করে নিতে হয়
মা তুমি সিরীয়াল দেখার জন্য সব কাজ ছাড়তে পারো তো আমি শুধু পড়া বাদ দিলেই তোমার বকা ঝকা শুরু হয়ে যায়, মা তুমি কোনদিন নিজের ভুলের জন্য নিজেকে বকা দিয়েছ? তা হলে আমদের ভুলের জন্য কবে আমদের বকা বন্ধ করবে মা
# মা আমি তোমাকে বললাম যে মা আজ আমার হোমওয়ার্ক ইচ্ছা নেই এই কথা শুনতেই তুমি বাবার সেই পুরোনো কেসেট চালু করে দিলে।
কিন্তু মা রবি বার দিন তোমার রান্না করার ইচ্ছা না থাকলে আমরা সবাই বাইরে খেতে যাই, কই তখন তো আমি তোমাদের কিছু বলি না।
আর বাবা তোমার কোনদিন অফিস যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে মা তোমার অফিসে ফোন করে বলে দেয় যে, আপনার দাদার আজ শরীর ভালো নেই তাই আজ অফিস যেতে পারবে না। 
তোমরা তো খুব বুঝরুক দায়িত্বশীল, সব কিছু বোঝ তাহলে তোমরা এটা কেনো বোঝ না যে, তোমরা তোমাদের কাজে একঘেয়েমী আসলে তোমরা তোমাদের রুটিন কাজ ছেড়ে দাও, তাহলে আমরা তোমাদের কাছে কি শিখব। তোমাদের এই ভুলের জন্য যদি আমি তোমাদের কিছু বলি, বোল তোমাদের কেমন লাগবে, বোল, তাহলে তোমরা আমাকে বার বার কেন আমার ভুল গুলোর জন্য বোল।
জাগো............।। অভিভাবক জাগো..................।।
আমাকে কেনো মারো?
# বাবা কালকে আমি তোমার হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলাম, তুমি তাড়াতাড়ি পার হচ্ছিলে, তাই আমি একটু পিছনে থেকে গিয়েছিলাম, এদিকে একটা স্কুটার আমাকে ধাক্কা দিতে দিতে অল্পের জন্য বেচে গেলাম। আর তুমি আমায় বললে, দেখে চলতে পারিসনা, বললাম তোকে আমার সঙ্গে হাটতে, তাও পারিসনা, মন কোথায় থাকে তোর অ্যাঁয়, বলেই দুই থাপ্পড় মেরে দিলে, ওই স্কুটারের কাকুটাও তোমাকে বলল যে, বাচ্চা আছে, মারছেন কেন ওকে।
বাবা আমি যদি ওতই বুঝতাম তাহলে তোমার হাত ধরে হাঁটতাম কেন,  বাবা তুমি ধীরে হাঁটতে পারো না, আমার সঙ্গে, তুমি জোরে হাঁটবে ওটাও আমার ভুল, তার ওপর তুমি আবার আমাকে মারবে, বাবা এরকম কেন, বাবা তুমি কবে আমায় মারা বন্ধ করবে।
কিছুদিন আগে সব্জিবাজারে একটা মোটর সাইকেলের লোক মাকে ধাক্কা মেরে দিয়েছিল, তখন তুমি ঐ মোটরসাইকেল ওয়ালার সঙ্গে ঝগড়া করছিলে, যে দেখে বাইক চালাতে পারোনা, তখন তুমি তো মাকে আমার মতো থাপ্পড় মারলে না, মাকে তোমার বোকা উচিত ছিল যে, এত বড় হয়ে গেছ তাও রাস্তা পার করতে পার না।
মা-বাবা তোমরা বড়, তাও তোমাদের ভুল হয়, আমারও হয়, ঠিক যেমন আমার সাথে হয়েছিল তেমনি মার সাথে হয়েছিল, কিন্তু তুমি শুধু আমার বেলা মেরেছিলে, বকেছিলে কারন আমি ছোট সেই জন্য তো।
# মা তুমি সেদিন আমায় হঠাৎ করে ওতো জোরে কেন মেরেছিলে, মা জানো আমার এখনও বেথা করছে। সকালে বাবার সঙ্গে তোমার ঝগড়া হয়ে গেলো, বাবা ব্রেকফার্স্ট না করেই অফিস চলে গেলো।
শেষ পর্যন্ত তুমি সমস্ত রাগ আমার উপর ঝেড়ে দিলে, সামান্য একটা ভুলের জন্য তুমি আমাকে ওত জোরে জোরে মারলে, আমি কি ধোপারঘাটের পাটাতন।
মা স্কুলে যদি আমায় টিচার বকা দেয়, শাস্তি দেয় আর আমার রাগ হয়, তাহলে সে রাগ আমি কোথায় ঝাড়ব, আমি যদি বাড়ি এসে সেই রাগ তোমার উপর ঝেড়ে দিই, তাহলে তোমার কেমন লাগবে, আমি যদি তোমাকে মেরে দিই তাহলে বল মা কেমন হবে
# বাবা গতকাল রাতে বিয়ে বাড়িতে আমরা খুব আনন্দ করলাম কিন্তু………
আমার ব্যবহার তোমার ভালো লাগে নি, সেইজন্য গাড়িতে আসার সময় আমাকে খুব বকা দিচ্ছিলে, বাড়ি এসে মেরেও দিলে, বাবা তোমার মনে আছে তো
বাবা আমার কোন ব্যবহার তোমার ভালো না লাগলে তুমি মেরে দাও যদি মার কোন ব্যবহার ভালো না লাগে তাহলে কি তুমি তাকে মারবে? তোমার অফিসের বসের ব্যবহার ভালো না লাগলে তুমি তাকে মারবে? না তো , শুধু আমাকে কেন মার খেতে হবে, বাবা কবে আমাকে মারা বন্দ করবে
# আমি অংকে ফেল করলাম, রেজাল্ট দেখে মা আমাকে এক থাপ্পড় মেরে বলল, দেখ গাধা তোর রেজাল্ট দেখ, তুই অংকে ফেল করেছিস
তোমার কথা ঠিক মা, অংকের মতো বিষয়ে আমি ফেল করলাম যার জন্য তুমি আমাকে মারলে, গাধা বললে, কিন্তু মা তোমরা যে সফল অভিভাবক হওয়ার সমস্ত বিষয়ে ফেল করলে, আমি তোমাদের কিছু বললাম আর এইভাবে আমাকে মারলে বকা দিলে, আমি কি অংকে পাশ হয়ে যাব, আমার ব্রেন খুলে যাবে? আমি বুদ্ধিমান হয়ে যাব, তাহলে আমি মার খেতে রাজি আছি, যত ইচ্ছে মার যে সময় আমাকে বকা বা মারার জন্য ব্যয় কর, তার অর্ধেক সময় যদি যে চ্যপ্টার গুল আমি পারি না, তার পিছনে ব্যয় করতে তা হলে, আমি নিশ্চয় পাশ হয়ে যেতাম
তাই দেরী হয়ে যাওয়ার আগে………

জাগো……… অভিভাবক জাগো…………
আমার তুলনা কর কেন?
বাবা! তুমি তুমিই, আর আমি আমিই আমার মতো কেউ দ্বিতীয় হবে না, আর না আমি কারও মতো হব, তুমি নিশ্চই কথাটুকু বুঝতে পারবে? তাহলে তুমি কেন অন্যের সাথে আমার তুলনা কর, পরীক্ষায় আমি ৫৫% পেলে তুমি আমার তুলনা গৌরাঙ্গের সাথে করেছ তুমি বলেছিলে, দেখ তোর বন্ধু গৌরাংগের রেজাল্ট দেখ, ৯২% পেয়েছে, আর তুমি? তোমার লজ্জা করেনা ওর কাছে কিছ শেখ?
যদি আমি তখন বলতাম যে, গৌরাঙ্গের বাবা তোমার থেকে অনেক বেশী রোজগার করে, যাও তুমি গৌরাঙ্গের বাবার কাছে শেখ কিভাবে বেশি রোজগার করতে হয়? তাহলে কি তোমার ভালো লাগতো? এই ভাবেই তুমি আমার অবস্থা বুঝতে পারতে।
# আমি সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠি, তাই মা রাগ করে বলে দেখ রিনা কে কোন সকালে উঠে গেছে, ও নিজের পড়া করছে, কিছু শেখ রিনার কাছে। উঠো রাজকুমার এবার ওঠ, অনেক বেলা হয়ে গেল।
মা তোমার হাতের পাকোড়া খাওয়ার সময় বাবা ছোটো মাসীর হাতের তৈরী পাকোড়ার প্রশংসা করাতে তোমার কত খারাপ লেগেছিল, তোমার খারাপ লেগেছিল না মা, তোমার যদি কারও সঙ্গে তুলনা করা ভালো না লাগে, তহলে তুমি আমার তুলনা কারও সঙ্গে কেন কর।
# আমার ঘর গুছানো ছিল না, বই খাতা ছড়ানো ছিটানো ছিলো, তখন তুমি আমাকে বকা দিয়ে বলেছিলে যে, কিছু বুঝতে পারছ, একটু পরে বাড়িতে লোক আসবে, যা গিয়ে দেখ, তোর বন্ধু রাকেশের ঘর দেখ কত সুন্দর গোছানো। ও সব জিনিষ কি সুন্দর  নিজের জায়গায় রাখে, কত ডিসিপ্লিন ও।
আচ্ছা বাবা, রাকেশ কোথায় ডিসিপ্লিন ঘর গোছানো শিখল, ওর বাবার কাছে শিখল না? কিন্তু তুমি তো আমার জন্য সময়ই বের করতে পারো না। আমি যদি তোমাকে বলি যাও রাকেশের বাবার কাছে শিখে আস, কিভাবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে অনুশাসন আনতে হয়, তাহলে তোমার কেমন লাগবে।
# মা বাড়িতে লোক আসলে তোমার লেকচার শুরু হয়ে যায়, বড় ছেলে আমার পড়াশুনায় খুব ভাল, খুব সুন্দর পড়াশুনা করে, খুব ডিসিপ্লিন আছে ওর মধ্যে আর ছোটোটা আমার একটা গাধা, সারা দিন শুধু দুষ্টুমি করতে থাকে, পড়াশুনাতে একদম মন নেই।
বাবা, মা সেদিন তোমাকে বলছিল যে সামনের ফ্ল্যাটের পিনাকিদা কত ভাল তোমার মত কথায় কথায় রাগ করে না, এই কথা শুনে তুমি রেগে বললে যে তাহলে পিনাকিকেই বিয়ে করলে পারতে, এখানে কি করতে আসলে, চলে যাও এখনও কিছু দেরী হয় নি।
তোমারও কারও সাথে তুলনা ভালো লাগে না। তোমার যে ব্যবহার ভালো লাগে না সেই ব্যবহার তুমি আমার সাথে করও কেন। তাই দেরী হওয়ার আগে..................।
জাগো............... অভিভাবক জাগো...........................
আমাদের সন্তানদের চিন্তাভাবনা গুলো জেনে মনে হয় আপনি চমকে উঠেছেন। আমাদের ভুল ত্রুটিগুলো শোধরাবার আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি। আমাদের সন্তানদের ভাবনা গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। তার পর আমাদের চিন্তা ভাবনা গুলো নিচে লিখতে হবেএটাই হলো আপনার জন্য হোমওয়র্ক। আপনি যদি চান যে আপনার বাচ্চা ঠিকমত হোমওয়র্ক করুক তাহলে আপনাকে নিচের হোমওয়র্কটা করতেই হবে। নিজের চিন্তা ভাবনা গুলো লিখেই এই বইয়ের বাকি অংশ পড়বেন। আজকের পর আমি কি করব ও করব না দুটোই ব্যপার নিচে লিখবেন।
আজকের পর থেকে আমি বাচ্চাদের সাথে এই ব্যবহার গুলো করব না....................................................................................।।
....................................................................................................................................................................................।।
আজকের পর আমরা সফল মা বাবা হওয়র জন্য এই গুলো করব..................................................................................................................................................................................................................
আপনার ও আপনার পরিবারের সুখ-সম্বৃদ্ধি ও আপনার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষতের কামনায় India’s No.1 Successful Parenting Seminar এর পরীক্ষিৎ জোবানপুত্রা ও রথীন ঘোষ
আপনার সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ এর জন্য আমাদের ফ্রী সেমিনার, পেইড ওয়ার্কশপ ও কাউন্সিলিং এর জন্য যোগাযোগ করুন  



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভালো চিন্তা

আপনি ও আপনার অবচেতন মনের শক্তি

সতী নারী